Monday, August 4, 2025

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিজের বক্তব্য লিখে দেওয়া ব্যক্তিকেও ছাত্রলীগ ট্যাগ দিচ্ছেন কাদের

আরও পড়ুন

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিজের বক্তব্য ও প্রেস রিলিজ লিখে দেওয়া রায়হান উদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ ট্যাগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী।

রোববার (০৩ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ভুক্তভোগী রায়হান এ অভিযোগ করেছেন।

রায়হান উদ্দিন তার ফেসবুক লিখেন, আব্দুল কাদের নোংরামি করতে গিয়ে আমাকে নিয়ে কিছু মিথ্যা কথা লিখেছে। ছোটলোকদের মতো আমি কখনো ফেসবুকে এইসব নিয়ে লিখি না এবং লেখার প্রয়োজনও মনে করি না। রাজনৈতিক ও মতাদর্শিক বিষয়কে আমি মতাদর্শিকভাবেই ডিল করতে বিশ্বাসী। কিন্তু কিছু না লিখলে মনে হবে ছোটলোকদের নোংরামিই সত্য। যদিওবা এইসব নোংরামি সামনে আরও হবে। আমাকে নিয়েই কেন কাদের এইটা লিখল, আমি জানি। কারণ কাদেরদের আমাকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করার সৎ সাহস নেই। কিছুদিন আগে থেকেই এইসব নোংরামি দেখেও চুপ ছিলাম।

অন্য এক পোস্টের কমেন্টে রায়হান কিছু ছবি সংযুক্ত করেন। সেখানে দেখা যায়, কাদের আন্দোলনের সময় শিবির নেতা সাদিক কায়েমকে মিডিয়াতে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য লিখে দিতে বলেন। সাদিক কায়েম তখন রায়হানকে সেগুলো ফরওয়ার্ড করেন। সেই মেসেজ উত্তরে রায়হান বক্তব্য লিখেও পাঠান৷

কাদের তার ফেসবুকে লিখেছেন, আরেকজন আছেন এমন। এফ রহমান হলের ১৮-১৯ সেশনের রায়হান উদ্দিন। যে ছাত্রলীগের এক্টিভ কর্মী ছিলেন। মেধাবী হওয়ার দরুন হল ক্যান্ডিডেটের বক্তব্যগুলা যিনি নিজে লিখে দিতেন, সারাক্ষণ ক্যান্ডিডেটের আগেপিছে থাকতেন, কাউকে ভিড়তে দিতেন না। এফ রহমানের হলের কুখ্যাত ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াজের একনিষ্ঠ অনুসারী এই রায়হান ৫ তারিখের পরে শিবিরের বড় নেতা হিসেবে হাজির হয়েছেন। আগের ফেসবুক আইডি বাদ দিয়ে এখন নতুন আইডি চালান। তবে আগের আইডি এবং তার কৃতকর্ম মুছে ফেলতে পারেন নাই। এখনো আছে।

কাদেরের এই অভিযোগের জবাবে রায়হান লিখেন, ৯ দফার ইংরেজি অনুবাদও আমি করেছি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পাঠানো প্রায় সকল ইংরেজি প্রেস রিলিজ আমার লেখা। কাদেরের লিখিত বক্তব্যগুলোও আমার লেখা। ২৪ জুলাই থেকে প্রায় সবগুলো প্রেস রিলিজে আমার সংশ্লিষ্টতা আছে।

তিনি বলেন, কাদের এইসব জেনেও বলে না কেন? সত্য গোপন করে গুজব ছড়িয়ে নোংরামি করতে চাইলে চালিয়ে যাও।

রায়হান তার আরেকটি পোস্টে লিখেন, প্রিয় কাদের, অভ্যুত্থানের সময় তোমার অনেক বক্তব্য ও প্রেস রিলিজ আমার লেখা। তুমি যখন সাদিক ভাইকে একটা বক্তব্য রেডি করে দেওয়ার জন্য মেসেজ দিতে, তখন ভাই আমাকে তোমার মেসেজ ফরওয়ার্ড করে লিখে নিতে বলতেন। তো তোমার বক্তব্য লিখে দিয়েছি বলে কি তোমার ছোটলোকি ও নোংরামির দায় আমাকে নিতে হবে?

তিনি লিখেন, ২০২২ সালের ১ আগস্ট প্রোগ্রামে না যাওয়া, গেস্টরুমে না আসা ও মুজিবের বিরুদ্ধে বলায়, হল নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজের নির্দেশনায় ছাত্রলীগ আমাকে সারারাত মানসিক নির্যাতন করে হল থেকে বের করে দেয়। আমি এই ট্রমা অনেকদিন ভুলতে পারিনি। এখনো সেই রাতের কথা মনে উঠলে আঁতকে উঠি। আমরা যখন ‘শিবির’ ট্যাগ খেয়ে হল থেকে বিতাড়িত হই, তখন নয়া বিপ্লবী কাদেরের সহযোদ্ধারা ছাত্রলীগের পদবী ধারণ করে বসে ছিলেন।

রায়হান লিখেন, রিয়াজ সভাপতি হওয়ার পর আমি যেহেতু মোটামুটি বক্তৃতা দিতে পারতাম, তাই আমার কাছে বক্তৃতা নিয়ে পরামর্শ চাইতো। আমি তাকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি—এইটা অপরাধ কেমনে হইলো? আমি তো ডিবেটে বহুজনকে পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু তাকে লিখে দিয়েছি—এইটা যদি প্রমাণ দেখাতে পারে, আমি জুতার মালা গলায় দিব। আর লিখে দিলেও সেইটা অপরাধ কেমনে হইলো? আমি তো বহু লোককে ক্লাসেও পড়াইছি যারা ছাত্রলীগ করতো। এর আগেও ‘শিবির’ ট্যাগ দিয়ে দুইবার হল থেকে সাময়িকভাবে বের করে দিয়েছিল।

তিনি ফেসবুক পোস্টের অভিযোগের জবাবে লিখেন, ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত আমি ফেসবুকে ছাত্রলীগের পোস্ট করেছি বাধ্য হয়ে (ঐ আইডি আমার বেহাত হয়ে গেছে)। আমার আগের একটা আইডি ছিল, যেটা এখনো আছে। সেখানে আমি পোস্ট করতাম—করতে হতো। নিয়মিত প্রোগ্রাম, মিছিল, গেস্টরুম করতে হয়েছে। করোনা পরবর্তী হলে উঠার পর আমি ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম ও গেস্টরুমে যাওয়া থেকে বিরত থাকি। ফলে বেশ কবার সিঙ্গেল গেস্টরুম ও হল থেকে বের করে দেয়।

তিনি লিখেন, ডিবেটিং ক্লাবের কমিটিতে সভাপতি হওয়ার পথ সুগম করতে আমাকে অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিল ছাত্রলীগের পদ নিতে, কিন্তু আমি পদ নেয়নি। আমি নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতায় সভাপতি হয়েছি। এরপর ছাত্রলীগের পাণ্ডারা নানাভাবে আমাকে পদ থেকে বহিষ্কার করার চেষ্টা করে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে একপর্যায়ে ছাত্রলীগের কথা না শুনায় ডিবেটিং ক্লাবের সব কার্যক্রম থেকে এক প্রকার অবাঞ্ছিত করে দেয়। সেইসব এভিডেন্স এখনো আছে। আমার সেক্রেটারি মেহেদি সাক্ষী।

রায়হান লিখেন, আমি গেস্টরুমে কেমন আচরণ করেছি, সেটা জুনিয়ররাই সাক্ষ্য দিবে। অনেককেই অনেক সময় বকা দিয়েছি—এইটা অস্বীকার করবো না। আমার জানামতে একদিন মুখ দিয়ে অশালীন শব্দ বের হয়েছিল, সেদিনই তার সাথে ব্যক্তিগতভাবে আমি মাফ চেয়েছি। আর বাকি সময় কারো অধিকার হরণ করিনি। ২০২০ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম করতে হয়েছে—হলের সবাই বাধ্য হয়ে করেছে। ফেসবুকে পোস্টও করতে হয়েছে—সবাইকে করতে হয়েছে।

রায়হান লিখেন, অনেকেই বারবার বলার পরও আমি এইসব কখনো উল্লেখ করিনি কারণ হাজার হাজার শহীদ ও আহতদের অবদানের কাছে আমি এইগুলোকে তুচ্ছ মনে করি। সাদিক ভাই অনেকবার লিখতে চাইলেও আমি ভাইকে না লিখতে বলি। কিন্তু, আমি নোংরামি না করতে চাইলেও তারা নোংরামি করবেই।

তিনি লিখেন, কাদের ডাকসুর আগে এই নোংরা খেলায় মেতে উঠে আমাকে দমাতে পারবে ভেবে থাকলে ভুল করবে। কাদেরকে বলবো—ভিপি হতে চাইলে এইসব ছোটলোকি ছেড়ে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করার সৎ সাহস থাকতে হবে। কাদের যাদের প্রেসক্রিপশনে এইসব নোংরা খেলা করছে, তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করছি।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ